তাড়াইলে বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ে ৪ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

তাড়াইল প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষক হাজিরার জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের নামে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি মেশিন বাজার মূল্যের চেয়ে ৬ হাজার টাকা অধিক মূল্যে  ক্রয় দেখিয়ে তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি শিক্ষকদের।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে থাকা  অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ  অস্বীকার করলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তারেক মাহমুদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে। তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাননি তিনি। এ ব্যাপারে লিখিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।   

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আদেশে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে বলা হয়,বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের পছন্দের মেশিন ক্রয় করে স্কুলে স্থাপন করবেন। কিন্তু; এ নির্দেশ সম্পূর্ণ  উপেক্ষা করেন  তাড়াইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব স্কুলের একাধিক   প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, যে শিক্ষা কর্মকর্তা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম যোগাযোগের মাধ্যমে তার পছন্দসই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে এসব ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ে বিদ্যালয়সমূহের কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছেন।

সূত্রমতে, তাড়াইল উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মোট ৭০ টি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে সরকারের দেয়া স্লিপের ফান্ড থেকে বায়োমেট্রিক  হাজিরা মেশিন ক্রয়ের জন্যে বরাদ্ধ রাখা হয়। তবে এসব মেশিনের বর্তমান বাজার মূল্য জানা নেই শিক্ষকদের।

এ ছাড়া শিক্ষা অফিসারের চলতি দায়িত্বে থাকা  সহকারী শিক্ষা অফিসারের নির্দেশের বাইরে গিয়ে দরদাম করে মেশিন ক্রয়ে সুযোগও দেয়া হয়নি কোন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহকারী শিক্ষা অফিসার তার সঙ্গে আগে থেকে গোপন চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্টান থেকে এ ৭০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন।

তাড়াইল উপজেলার এসব সরকারি প্রাথমিক  বিদ্যালয়ে ইংরেজিতে লেখা জেড-কে-টি,লগো সম্বলিত আই-ক্লক ৯০০০জি, মডেলের মেশিন লাগানে হয়েছে। মেশিন গুলোর বর্তমান দুই বছরের ওয়ারেন্টি এবং দুই বছরের সার্ভিসিং সুবিধাসহ ১১ হাজার টাকা বাজার মূল্য ধরা হয়েছে।

সূত্রমতে, এতে করে  প্রতিটি বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ে ৬ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত ধার্য্য করে ৭০টি স্কুলের ৭০টি মেশিন ক্রয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

উপরন্তু; অভিযোগ রয়েছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির  ডিজিটাল হাজিরা ফাঁকি দেয়ার জন্যে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তিনি একটি করে ডিজিটাল কার্ড দিয়ে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আরও ৫০০ টাকা করে  মোট ৩৫ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের আমদানীকারক প্রতিষ্টান ঢাকার ত্রি-মাত্রিক মাল্টিমিডিয়া সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাড়াইল উপজেলার স্কুলগুলোতে সরবরাহকৃত মডেলের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন গুলোর  বাজার মূল্য ৭ হাজার টাকা মাত্র।

এর সঙ্গে রয়েছে, সফটওয়ার ফি ২হাজার টাকা এবং ইনস্টল ফি ১হাজার টাকা। পাইকারী কিংবা খুচরো যে কোনো ভাবে এ মেশিন ক্রয় করা হলেও দামের তারতম্য হয়ার কথা নয়।

আজ রোববার সন্ধ্যার পর এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কাছে এ অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, এসব বায়োমেট্রিক  হাজিরা মেশিন ক্রয়ে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই, তাই টাকা আত্মসাতেরও প্রশ্ন উঠেনা।

অপরদিকে, তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারেক মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এ অভিযোগের শোরগোল শোনার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ও লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ আইনানুগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।