আজ ২২ শ্রাবণ। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি খসে পড়েছিল এ দিনেই।
৮০ বছর আগে এমনই একদিন খ্রিস্টীয় ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বাংলা সাহিত্য ও কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরলোকগমন করেন।
৮০ বছর বয়সে তার মৃত্যু ছিল দেহান্তর মাত্র। তিনি বাঙালির মণিকোঠায় ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে মানবজীবনের পথচলার সমাপ্তি তাকে তিনি বরণ করে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘মৃত্যুঞ্জয়’ কবিতায় লিখেছেন, ‘যত বড়ো হও,/তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও/আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে/যাব আমি চলে।’ আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের মূল্য দিতে হয়/সে প্রাণ অমৃতলোকে/মৃত্যু করে জয়।’ নিজের কথার মতোই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাঙালির মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের মনমানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। আমাদের জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটিও আমরা রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে পেয়েছি। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথম এশীয় হিসাবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দেশজ শিক্ষা ব্যবস্থা বিকাশের লক্ষ্যে তিনি গড়ে তোলেন শান্তি নিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কৃষির উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। বাংলায় আলু, ভুট্টা ইত্যাদি চাষের সূচনা ঘটে তারই উদ্যোগে। দরিদ্র কৃষককে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে নোবেল পুরস্কারের অর্থে কৃষি ব্যাংকের কাজ শুরু করেন। বঙ্গভঙ্গ রদ করার দাবিতে হিন্দু-মুসলমানদের নিয়ে রাখিবন্ধন কর্মসূচিতে রাজপথে নেমে আসেন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘নাইট’ উপাধি দিলেও ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সারা বিশ্বের মহামারির এ ক্রান্তিলগ্নে তার গান, কবিতা, উপন্যাস, গল্প আমাদের ধৈর্য ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
কর্মসূচি : রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট বিশেষ আয়োজন রেখেছে। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ছায়ানটের ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/chhayanaut1961) ও ইউটিউব চ্যানেলে (youtube.com/ChhayanautDigitalPlatform) থেকে প্রচার হবে অনুষ্ঠানটি।
আজ বিকাল ৪টায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি অনলাইন মাধ্যমে আলাচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। পূর্ববঙ্গ থেকে বাংলাদেশ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল এবং অধ্যাপক অনীক মাহমুদ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী অদিতি মহসিন এবং রবীন্দ্রকবিতা থেকে আবৃত্তি পরিবশেন করবেন বাচিকশিল্পী রুবীনা আজাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।