জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে স্বশিক্ষিত যুবক আবদুল মান্নান ২৫ বছর বয়সে ১৮ বছর বয়স দেখিয়ে ১৯৪২ সালে সৈনিক হিসেবে নাম লিখান। ট্রেনিং নেন ভারতের হায়দ্রাবাদে। তারপর যুদ্ধ জাহাজে চড়ে রণাঙ্গনের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিভিন্ন স্থান ঘুরে শেষ পর্যন্ত ১৯৪৫ সালে বার্মায় অবস্থান নেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকার জন্য ল্যান্স নায়েক হিসাবে পদোন্নতিও পান আবদুল মান্নান । আর সে সময় জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে এ্যাটমবোমা বিস্ফোরণের পর যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। আবারও চার হাজার সৈন্যবাহী জাহাজে চড়ে রণাঙ্গন ছেড়ে চলে আসেন হায়াদ্রাবাদে। সেখান থেকেই হাতে পাঁচশত টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয় তাকে
তারপর থেকে সম্মানি হিসেবে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও সেটি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। নব্বইয়ের দশকে এমন পরিস্থিতিতে বৃটেনের রাণী এলিজাবেথকে চিঠি লিখে তার দুর্দশার কথা জানান আবদুল মান্নান। রাণীর নির্দেশে বৃটিশ হাইকমিশন সরকারের সহযোগিতায় ও-ই সম্মানী ভাতা নিয়মিত করার ব্যবস্থা করে। এখন পর্যন্ত বছরে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা সম্মানী মিলে তার কপালে। আর কোনো আয়ের উৎস না থাকায় ভাঙা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে ১১ সন্তানের পিতা এ বীর সৈনিক ল্যান্স নায়েক আবদুল মান্নানকে। থাকতে হচ্ছে একটি জরাজীর্ণ ঘরে।
সৈনিক আবদুল মান্নান, তার মেয়ে সেলিনা আক্তার এবং এলাকাবাসী বলেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের দু'টি "ওয়ারসেমিস্ট্রি" রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের সেখানে মর্যাদার সঙ্গে সমাহিত করে তাদের সমাধি মর্যাদার সঙ্গে রক্ষানাবেক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ; আজও বেঁচে থাকা সেই যুূ্দ্ধের সৈনিকের এমন পরিণতি বিশ্বাস করার মতো নয়।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এর সঙ্গে কথা হলে তিনি সাতকাহনকে জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার সুবাদে সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিক ল্যান্স নায়েক আবদুল মান্নানের কাহিনি জেনেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং সম্ভব হলে বৃটিশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ-ই শতবর্ষী সৈনিককে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।