কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে পাঁচটি লোহার বানানো দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সটি খোলা হয়। কিন্তু এবার দানবাক্স খুলে সবার চক্ষু চড়কগাছ!
এবার তিন মাস ১৩ দিন পর শনিবার মসজিদের দানবাক্স খুলে মিলেছে নগদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারসহ অনেক বিদেশি মুদ্রাও।
তিন মাস ১৩ দিন পর শনিবার দানবাক্স খুলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টাকা গণনা। প্রতি তিন মাস পরপর খোলা হয় পাগলা মসজিদের দানবাক্স হিসেবে ব্যবহৃত পাঁচটি লোহার সিন্দুক। আর বরাবরই এ সব দানবাক্স খুললে বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার মেলে।
এর আগে গত ১৩ জুলাই এ সব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার।
মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন বলছে, এ সব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন বলছেন, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।
মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান-খয়রাত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।
তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।
আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ' বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মীর মো. আল কামাহ্ তমাল, নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান, উবাইদুর রহমান সাহেল, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা, রূপালী ব্যাংকের এজিএম অনুফ কুমার ভদ্র, সহকারী, মো. খাইরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, কমান্ডার আসাদ উল্লাহসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজনের উপস্থিতিতে আজ শনিবার দানবাক্সগুলো খোলার পর সকাল থেকে প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ব্যাংক, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা টাকা গুনার কাজে অংশ নেন।
