কিশোরগঞ্জের লোক কাহিনী-উপাখ্যানের ওপর সৃষ্টি বিপুল প্রশংসিত ও সমাদৃত "মাধব মালঞ্চি কইন্যা" গীতি নৃত্য নাট্যের পর এবার বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর জীবন কাহিনী নির্ভর "চন্দ্রাবতীর কথা" ফিল্মও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগালো।
ষোড়শ শতকের ভাসান গানের অন্যতম স্রস্টা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের পাথুয়াইর গ্রামের ফুলেশ্বরী নদী তীরের অধিবাসী দ্বীজ বংশী দাসের কন্যা ময়মনসিংহ গীতিকা খ্যাত ষোড়শ শতকের রোমান্টিক কবি চন্দ্রাবতীর ওপর নির্মিত ফিল্ম প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্ক ও লকডাউনের মধ্যে-ই ষোড়শ শতকের রোমান্টিক কবি চন্দ্রাবতীর জীবনের বিয়োগান্তক জীবন কাহিনী নির্ভর " চন্দ্রাবতীর কথা" চলচ্চিত্র অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে এ সু-খবর বয়ে এনেছে।
এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে এই ছবি। মঙ্গলবার এ সুখবরের চিঠি উড়ে এসে জমা হয়েছে ফিল্মটির পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরীর মেইল বক্সে। এ গৌরব ও সাফল্যের
অনুভূতি জানাতে গিয়ে পরিচালক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গবেষণা, শুটিং পূর্ব প্রস্তুতি, শুটিং, পোস্ট প্রোডাকশন-সব মিলিয়ে পাঁচ বছরের মতো সময় লেগেছে চন্দ্রাবতী কথা ছবিটি সম্পন্ন করতে। ভালোই লাগছে। কেননা, এপিএসএ এই মহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চলচ্চিত্র উৎসব। বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে এখানে ছবি জমা পড়েছে।’
বাংলাদেশের দর্শকেরা ছবিটি কবে দেখতে পাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর আসে, ‘২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমরা ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিই। ছবিটি এখনও সেখানেই আছে। সেন্সর বোর্ড থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। আমরা অপেক্ষা করছি। মহামারির কাল শেষ হোক। সবকিছু ঠিক থাকলে যত দ্রুত সম্ভব আমরা দেশের মানুষকে ছবিটি দেখাতে চাই।’
পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী জানান, ২০১৫ সালের সরকারি অনুদান, ম্যানগ্রোভ পিকচারস ও বেঙ্গল ক্রিয়েন্সের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে এই চলচ্চিত্র।
২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই উৎসবের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে।
‘চন্দ্রাবতীর কথা’ ছবিটির প্রিমিয়ার হয় ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে।
১৫৫০ থেকে ১৬০০ সালের সময়কার চন্দ্রাবতী জীবন্ত হয়ে উঠেছেন ‘আলফা’খ্যাত দোয়েল ম্যাশের শরীরে।
এ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মিতা রহমান, গাজী রাকায়েত, আরমান পারভেজ মুরাদ, কাজী নওশাবা আহমেদসহ অনেকে।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চন্দ্রাবতীর জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ ছাড়াও ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন ঋতুতে শুটিং হয়।
পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলেছে ভারতে। সংগীত পরিচালনা করেছেন কলকাতার সাত্যকি ব্যানার্জি। সূত্র: প্রথম আলো।
এর আগে কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদের লোককাহিনী ও উপাখ্যানের ওপর নির্মিত গীতি নৃত্য নাট্য "মাধব মালঞ্চি কইন্যা' কলকাতা নাট্য মঞ্চে দেড়শ' রজনী মঞ্চস্ত হয়। এ ঘটনা উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ঝড় তুলে।
কিশোরগঞ্জের পাথুয়াইর গ্রামে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কবি চন্দ্রবাতী ও তার পিতা দ্বীজ বংশী দাসের দু’টি মন্দির। কিন্তু; কালের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে ফুলেশ্বরী নদী।
তবে, কবি চন্দ্রাবতী ও তার প্রেমিক জয় চন্দ্রের প্রেম-বিরহের কাহিনী এবং চন্দ্রাবতীর গীতি-কবিতা আজও বিরহী বর্ষায় শাপলা-শালুক হয়ে ফুটে।