যিনি সদম্ভে উচ্চারণ করতেন "আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি,আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালবাসি" -সেই জনতা অন্তঃ প্রাণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ ৪৭ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
আজ বাঙালি জাতির শোক ও বেদনার সাগরে ভাসার দিন। আজ জাতীয় শোক দিবস।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই কালো দিবসে বাঙালি জাতির অহঙ্কার স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও ইতিহাসের এই মহানায়ককে হারিয়েছিল।
এ-ই রক্তলেখা শোকের দিনটি আজ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দেশজুড়ে নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে পালিত হবে। চোখের জল বিসর্জন দিয়ে শোকের বোঝা হালকা করার প্রয়াস চালানো হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা।
পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্টের সেই রক্তঝরা দিনটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের অধিকাংশ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণ করেন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের কূট চক্রান্ত ও সেনাবাহিনীর এক দল বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা ও সদস্যের নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তাঁর সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল।
দূর প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশুপুত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ ক'জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এই বীর শহীদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে এ ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নার্জিত স্বাধীনতা এবং অবাক করা সব অর্জন ও আকাঙ্ক্ষাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল।
মুছে ফেলতে চেয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাঁথার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকেও।
কিন্তু; শেষ পর্যন্ত খুনিদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
অভিশপ্ত সেই দিনটিতে বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল; দীর্ঘ ৩৪ বছরের বেশি সময় পর বাঙালি জাতি সে কলঙ্ক মুছে দায়মুক্তি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায়ে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জনক হত্যা, ষড়যন্ত্র ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অধ্যায়ের অবসান হয়েছে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রা আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে।
এখন শুধু বিভিন্ন রাষ্ট্রে আত্মগোপনে থাকা বাকি খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে জাতি।
সেই বাকি খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতি একদিন পুরোপুরি দায়মুক্ত হবে। এমনটি প্রত্যাশা সকলের।