গৌরবময় ৫১তম বিজয় দিবস দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে। মহান বিজয় দিবসের মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীর অপতৎপরতা রুখে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার তৃপ্ত অঙ্গীকারে পালিত হয়েছে রক্তস্নাত এ বিজয় দিবস।
১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বুক বুক রক্ত আর মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে দখলদার পাক হানাদার বাহিনী।
এ চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে আমাদের এ বিজয়ানন্দ ছিল তাজা রক্ত আর মা-বোনদের আর্তনাদ-হাহাকারে মাখা বেদনার নীলাভ ধারাপাত। লালসবুজ পতাকা উত্তোলনের মাহেন্দ্রক্ষণ।
তাই জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর মমতাভরে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের; যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের।
এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। সঙ্গী ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল আত্মত্যাগী নির্মোহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মহান বিজয় দিবসে তাদের সকলের জন্যই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অর্ঘ্য সাজিয়ে দেশব্যাপী চলে অমলিন আত্মত্যাগের মহিমা কীর্তন। চোখের জল এবং স্মৃতি সৌধে ফুলে ফুলে তাঁদের বরণ করে নেয়া হয়।
৫১ বছরের এ পথপরিক্রমায় সে স্বপ্নের কতটা পূরণ হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও দু:স্বপ্ন বারবার বাঁধাগ্রস্ত করেছে সে গৌরবোজ্জ্বল পথপরিক্রমা।
ইতিমধ্যেই মানবতা বিরোধী অপরাধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং জেল হত্যা দিবসের বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বারবার স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতায় রাজনীতি এগিয়েছে অমসৃণ পথে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর সব ঘটনায়।
এমন পরিস্থিতিতে জনবহুল ও সীমিত সম্পদের এ দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলার কাজও সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন দিনগুলোয় রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র চালু করতে হয়েছিল। স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি সংবিধানও প্রণয়ন করা হয়েছিল।
ধাপে ধাপে উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে একই ধারার । তবে দারিদ্র্য এখনও প্রকট। তাই অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বুক বাঁধতে হচ্ছে।
যে কোনো জাতির শক্তির প্রধান উৎস ঐক্য। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন এমন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। মুক্তিযুদ্ধে এ মহান বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ। এ জন্যই সম্ভব হয়েছিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মাত্র নয় মাসে পরাজিত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার পর সেই ঐক্য ধরে রাখা যায়নি । গুরুত্বহীন বিষয়েও রাজনৈতিক বিভক্তি দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করার পথে বড় অন্তরায় হয়ে রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সকল নেতৃত্বকে।
সেই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় অভিন্ন নীতি অনুসরণ অপরিহার্য। বাংলাদেশের সামনে অসীম সম্ভাবনার হাতছানি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সমস্যা মোকাবেলায় সচেষ্ট হলে অগ্রগতির স্বর্ণ শিখরে আরোহন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিভেদ- বিভাজন ভুলে সে পথেই অগ্রসর হবে বাংলাদেশ-তাই হোক বিজয় দিবসের দৃপ্ত অঙ্গীকার।" সব ক'টা জানালা খুলে দাও না।" পথ না হারাক বাংলাদেশ।